ঘুষের কোটি টাকা ও বেশ কয়েকটি চেকসহ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে আটক করেছে র্যাব-১৫। এর বাইরে এবার চিহ্নিত ৫৪ দাললালকে খোঁজা হচ্ছে।
যার মধ্যে শীর্ষ দালাল হোছন ড্রাইভার , মাসুম , সাগরসহ ভুমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপুরনের টাকা নিয়ে চিনিমিনি খেলা শীর্ষ চিহ্নিত দালালদের ধরতে ও অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে একটি সুত্র।
কক্সবাজার শহরের বাহারছরা বাজার ও তারাবনিয়ারছরা এলাকার দুইটি বাসায় অভিযানকালে একজনকে আটক করা গেলেও অপর দুই সার্ভেয়ার পালিয়েছে।
এসময় টাকা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক চেক ও সরকারি নথিপত্র জব্দ করেছে অভিযানকারিরা।
গত বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া ও তারাবনিয়ারছড়া এলাকায় এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান র্যাব-১৫ রামুর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান।
আটক মোহাম্মদ ওয়াসিম কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
অভিযানে পালিয়ে যাওয়া অপর দুই সার্ভেয়ার হলেন মোহাম্মদ ফরিদ ও মোহাম্মদ ফেরদৌস।
মেজর মেহেদী বলেন, কক্সবাজারে সরকারের অর্ধ শতাধিক মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমও চলমান। এ ভূমি অধিগ্রহণকে ঘিরে সংঘবদ্ধ একটি চক্র জমির মালিকদের নানাভাবে জিম্মি করে বড় অংকের টাকা কমিশন হিসেবে আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর সূত্র ধরে ভূক্তভোগী বেশ কয়েকজন জমির মালিক র্যাবসহ বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ঘুষের ৯৩ লাখের বেশী টাকাসহ একজনকে আটক সম্ভব হলেও অন্য ২ জন পালিয়ে যায়। এসময় বিভিন্ন ব্যাংকের অনুকূলে বেশ কয়েকটি চেক ও নথিপত্রও উদ্ধার করা হয়।
মেহেদী বলেন, এর মধ্যে কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ারছড়া এলাকার একটি থেকে নগদ ১৬ লাখ টাকাসহ জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ওয়াসিমকে আটক করা হয়। এছাড়া বাহারছড়া বাজার এলাকায় লালু সওদাগরের বিল্ডিংয়ে সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ফরিদের বাসা থেকে নগদ ৬০ লাখ টাকার বেশী এবং মোহাম্মদ ফেরদৌসের বাসা থেকে ১৭ লাখ টাকার বেশী উদ্ধার করা সম্ভব হলেও র্যাবের উপস্থিতির টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। আটকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান মেজর মেহেদী।
ভুক্তভোগীদের মতে, শুধু এরা নয়, এলএ অফিসের সিংহভাগ সার্ভেয়ার, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও অফিসাররা নানা কায়দায় জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার একটি অংশ এলআর ফান্ডেও যায় বলে জেলার শীর্ষ কর্মকর্তাগণের কাছেও কোন প্রতিকার মিলে না। বাধ্য হয়ে দালাল ও সার্ভেয়ারের দারস্থ হতে হয় ভূমি মালিকদের। ফলে নিম্ন ২০ শতাংশ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন ছেড়েই দিতে হয় জমির নিরহ মালিকদের। অনেক ক্ষেত্রে দালালদের সাথে চিহ্নিত কয়েকজন সাংবাদিকও এসব কমিশন বাণিজ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
এদিকে, মেগা-প্রকল্প চালুর পর ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমান হয়ে সাবেক ডিসি রুহুল আমিন, এডিসি জাফর আলমসহ বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার কারাভোগ করেছেন। নিকট অতীতেও বর্তমান ডিসিসহ বেশ কয়েকজনের নামে দূর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা ফাইল করেছিলেন মহেশখালীর জনৈক ব্যক্তি। অবশ্য আদালত তা আবার খারিজও করেছিলেন। এর অল্পদিন না যেতেই বুধবার র্যাবের অভিযানে ঘুষের নগদ প্রায় কোটি টাকাসহ সার্ভেয়ার আটকের ঘটনা ঘটলো।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, একটু আগে জেনেছি আমার অফিসের এক সার্ভেয়ার বেশ কিছু টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছে। এটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলআর ফান্ড ও তাদের নিত্য অপরাধ সম্পর্কে অভিযোগ গুলো সত্য নয় দাবি করে ডিসি আরো বলেন, চেকগুলো কনফারেন্স রুমে উপকারভোগীদের ডেকে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কোথাও হয়রানির শিকার হয় কি না। কিন্তু কেউ অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না এবং অপকর্মগুলোও আড়াল থাকে। কারো এমন অপরাধ সামনে আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবো না।
এদিকে চিহ্নিত এলএ অফিসের দালাল ধরতে ও অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে একটি সুত্র। এদের মধ্যে শীর্ষ ৫৪ দালাল রয়েছে বলে দাবী করেন সুত্রটি। সি-প্লাস
পাঠকের মতামত: